এটা কি সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট?
হামিংবার্ডের জিভ
বিজ্ঞানীরা একসময় মনে করতেন, হামিংবার্ড সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম নালিকার মাধ্যমে ফুলের মধু সংগ্রহ করে। এই প্রক্রিয়া ক্যাপিলারি অ্যাকশন বা কৈশিক প্রক্রিয়া হিসেবে পরিচিত। কিন্তু পরে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, মধু সংগ্রহ করার জন্য তারা আরও কার্যকারী এক উপায় অবলম্বন করে, যেটাকে “ফ্লুইড ট্র্যাপ” বা মধু সংগ্রহের ফাঁদ বলা হয়।
বিবেচনা করুন: ফুলের মধু খাওয়ার সময় হামিংবার্ডের জিভ আনুভূমিকভাবে দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায় আর এর ফলে দুটো কাঁটার মতো অংশ সৃষ্টি হয়। প্রত্যেকটা কাঁটার উপরের অংশে বেশ কয়েকটা খাঁজ কাটা অংশ থাকে। এই খাঁজ কাটা অংশগুলো আসলে পরবর্তী সময়ে গুটিয়ে নেওয়া যায়। ফুলের মধু খাওয়ার সময় এই খাঁজগুলো খুলে যায়। এর ফলে হামিংবার্ড মধু টেনে নেওয়ার পরিবর্তে মধু শোষণ করে। যখন এরা ফুল থেকে জিভ বের করে নেয়, তখন উলটোটা ঘটে। এই খাঁজ কাটা অংশগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং এর মধ্যে মধু জমা হয়।
আলাহান্দ্রু রিকো গেভারা এবং তার সহযোগীরা এই মন্তব্য করেন, “সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটা শেষ হতে এক সেকেণ্ডের দশ ভাগের এক ভাগেরও কম সময় লাগে।’’ তারা আরও বলেন, ”জিভের সামনের দিক মধু সংগ্রহের এক ক্ষমতাশালী যন্ত্র হিসেবে কাজ করে, যেটা দ্রুত আকার পরিবর্তন করে বার বার ফুলের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে মধু সংগ্রহ করতে পারে।”
এর চেয়েও বড়ো বিষয় হল, এই প্রক্রিয়ায় ছোট্ট পাখিদের নিজস্ব কোনো শক্তি ক্ষয় হয় না। যে-শক্তি প্রয়োগের ফলে তাদের জিভের অগ্রভাগ বন্ধ হয় এবং খুলে যায়, সেই জটিল শক্তি ব্যবহার করে তারা ফুলের মধ্য থেকে মধু সংগ্রহ করে।
যেহেতু হামিংবার্ড পাখির জিভ এত কার্যকারী উপায়ে মধু সংগ্রহ করে, তাই গবেষকরা মনে করেন, তারা এই পাখিদের কাছ থেকে যা-কিছু শেখেন, সেগুলো চিকিৎসাবিজ্ঞান, রোবট নির্মাণ ও তার ব্যবহার এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারেন। এটা হয়তো এমন যন্ত্র তৈরি করার ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হতে পারে, যেটা পড়ে যাওয়া তরল পদার্থ কিংবা তেল পরিষ্কার করতে পারে।
দেখুন, একটা হামিংবার্ড তার জিভকে প্রসারিত করছে
আপনি কী মনে করেন? হামিংবার্ডের জটিল জিভের এই বিশেষ ক্ষমতা কি বিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে? না কি এটা সুপরিকল্পিতভাবে সৃষ্ট?