সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও অন্যদের প্রতি চিন্তা দেখানো

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও অন্যদের প্রতি চিন্তা দেখানো

 ব্রাজিলে বসবাসরত মারিয়া লুসিয়া নামের এক বোন আসার সিনড্রোম নামক এক বংশগত রোগে ভুগছেন। এই রোগের কারণে একজনের দেখার ও শোনার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যায় বা তিনি সম্পূর্ণ বধির হয়ে যান। মারিয়া জন্ম থেকেই বধির ছিলেন আর ছোটোবেলা থেকেই সাংকেতিক ভাষা শিখেছেন। পরে ৩০ বছর বয়সে তিনি তার দৃষ্টিশক্তিও হারাতে শুরু করেন। তার এই সমস্ত প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও মারিয়া নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখেননি। এখন তার ৭০ বছর বয়সেও তিনি এক সুখী এবং অর্থপূর্ণ জীবন উপভোগ করছেন।

 মারিয়া লুসিয়ার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার আগে ১৯৭৭ সালে যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তিনি বলেন, “আমার স্কুলের এক সহপাঠী, আদ্রিয়ানোর সঙ্গে আমার দেখা হয়, যে-সম্প্রতি একজন যিহোবার সাক্ষি হয়েছে। ভবিষ্যতে পৃথিবী যে এক পরমদেশ হবে, সেই বিষয়ে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে সে আমাকে জানায়, যেখানে লোকেরা নিখুঁত স্বাস্থ্য নিয়ে আনন্দের সঙ্গে বেঁচে থাকবে। সেই কথাগুলো শুনে আমার এতটাই ভালো লাগে যে, আমি বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য রাজি হয়ে যাই। কিছু দিনের মধ্যেই আমি রিও ডি জেনিরোতে এমন এক মণ্ডলীতে যোগ দিতে শুরু করি, যেখানে সভার বিষয়গুলো সাংকেতিক ভাষায় অনুবাদ করা হত। এভাবে যিহোবার সাহায্যের কারণেই তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয় এবং ১৯৭৮ সালের জুলাই মাসে আমি বাপ্তিস্ম নিই।”

 পরে, একটা সময়ে মারিয়া লুসিয়া এমন একটা মণ্ডলীতে যান, যেখানে কোনো ভাই-বোনই সাংকেতিক ভাষা জানত না। সেই মণ্ডলীর সভাগুলোতে কী আলোচনা হচ্ছে, তা তিনি বুঝতে পারতেন না আর এটা তার সামনে এক বড়ো বাধা হয়ে দাঁড়ায় । পরে দু-জন বোন তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে। তারা মিটিং-এর সময় তার পাশে বসে সভাতে যা আলোচনা হয় সেগুলোর কিছু নোট তাকে লিখে দেয়। মারিয়া বলেন, “বাড়িতে বসে আমি সেই নোটগুলো বার বার পড়তাম, যাতে সভার বিষয়গুলো আমি ভালো করে বুঝতে পারি। পরে, সেই বোনেরা সাংকেতিক ভাষা শেখে এবং আমার অনুবাদক হয়ে ওঠে।”

 বোন মারিয়ার দৃষ্টিশক্তি দিন দিন আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছিল, এর জন্য তিনি সেই বোনদের সাংকেতিক ভাষার অনুবাদ আর দেখতে পাচ্ছিলেন না। তাই, তিনি ট্যাকটাইল নামক এক সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করেন। এটা আসলে কেমন ভাষা? তিনি বলেন,“যারা আমার জন্য অনুবাদ করেন, তাদের হাতের উপর আমি আমার হাত রাখি আর আঙ্গুলের বিভিন্ন স্পর্শের মাধ্যমে তারা আমার জন্য অনুবাদ করে দেন।”

 বোন মারিয়াকে এই বোনেরা অনুবাদ করে যে-সাহায্য করেছে, এর জন্য তিনি খুবই কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, “তারা আমার জন্য যিহোবার কাছ থেকে এক মূল্যবান উপহার কারণ তাদের সাহায্যেই আমি মণ্ডলীর সভা ও সম্মেলনগুলো থেকে উপকার পাচ্ছি।”

 বোন মারিয়া প্রচারেও বেশ উদ্যোগী রয়েছেন। ট্যাকটাইল ভাষা ব্যবহার করে বোন বধিরদের কাছে সাক্ষ্য দেন আর সুসমাচার প্রচারে বোনের এই প্রচেষ্টা দেখে সেই ব্যক্তিরা বেশ অবাক হয়ে যায়, তবে এর সঙ্গে সঙ্গে তারা আনন্দিতও হয়। কোভিড-১৯ অতিমারির সময়ে বোন মারিয়া বধিরদের সাহায্য করার জন্য অনেক চিঠি লেখেন। আর সেই চিঠি লিখতে তার ছোটো ভাই জোস অ্যান্তোনিও তাকে সাহায্য করেন, যিনি নিজেও একজন বধির এবং অন্ধ ছিলেন। a

 বোন মারিয়া কীভাবে সেই চিঠিগুলো লেখেন? তিনি বলেন, “আমি ইংরেজি বর্ণ L-এর মত একটা প্লাস্টিক ব্যবহার করি, যাতে চিঠি লেখার সময়ে লাইনগুলো সোজা হয় আর প্যারাগ্রাফ আকারে লিখতে পারি। আমার ভাই জোস অ্যান্তোনিওর খুব ভালো স্মৃতিশক্তি থাকার কারণে আমি চিঠিতে কোন বিষয়গুলো এবং শাস্ত্রপদগুলো লিখব, সেই বিষয়ে সে আমাকে সাহায্য করত। যেহেতু সমস্ত বধির ব্যক্তি লিখিত ভাষা বুঝতে পারত না, তাই আমি এমনভাবে লেখার চেষ্টা করতাম যাতে তারা সহজেই তা বুঝতে পারে।”

 মারিয়া লুসিয়া এখন পুরোপুরিভাবে অন্ধ হয়ে গেছেন, তা সত্ত্বেও তিনি খুবই পরিশ্রম করেন। তার অনুবাদকদের মধ্যে একজন বোন ক্যারোলিনে বলেন, “মারিয়া লুসিয়া তার ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং পরিপাটি রাখার জন্য সমস্ত কাজ করেন। এ ছাড়া, তিনি খাবার রান্না করতে আর বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতেও ভালোবাসেন।”

 মারিয়া লুসিয়ার মণ্ডলীর একজন প্রাচীন ভাই জেফার্সন, বোনের বিষয় এও বলেন, “যিহোবার প্রতি মারিয়া লুসিয়ার গভীর ভালোবাসা রয়েছে আর তিনি লোকদেরকেও খুব ভালোবাসেন। তিনি সবসময় নিজের প্রতি চিন্তা না দেখিয়ে বরং অন্যদের উপকারের জন্য কাজ করেন।”—ফিলিপীয় ২:৪.

a মারিয়া লুসিয়া একজন সাক্ষি হওয়ার পর ২০০৩ সালে তার ভাই জোস অ্যান্তোনিও বাপ্তিস্ম নেন। মারিয়ার মতো তিনিও জন্ম থেকেই বধির ছিলেন আর ধীরে ধীরে তার দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে যায়।