সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমরা যা মনে করি, তা কি সবসময় আমাদের নির্ভরযোগ্য নির্দেশনা দেয়?

কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল: অন্যেরা কীভাবে নির্ধারণ করে?

কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল: অন্যেরা কীভাবে নির্ধারণ করে?

প্রায় প্রত্যেকেই এই বিষয়ে একমত যে, কিছু কাজ করা ঠিক আর কিছু কাজ করা ভুল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হত্যা, ধর্ষণ এবং শিশু যৌন নির্যাতনকে সবাই নিন্দা করে। অপর দিকে, সুবিচার, দয়া এবং সমবেদনা দেখানোকে সবাই প্রশংসার কাজ বলে মনে করে। কিন্তু যখন জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো আসে, বিশেষ করে যৌনতা এবং সন্তান লালনপালনের মতো বিষয়, তখন অনেক ব্যক্তি মনে করে যে, এই ক্ষেত্রে সঠিক ও ভুল বলে কিছু হয় না। তাদের মতে, যার যা ইচ্ছা সে সেটাই বাছাই করতে পারে। তাই বেশিরভাগ লোক, নিজেরা যা মনে করে আর অন্যেরা যা মনে করে, সেটার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এটা কি সঠিক?

আমরা যা মনে করি

আমরা প্রায়ই আমাদের বিবেকের উপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্ত নিই আর সেটা আমাদের বলে দেয়, আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক না ভুল। (রোমীয় ২:১৪, ১৫) এমনকী ছোটোবেলা থেকেই শিশুরা বুঝতে পারে, কোন কাজটা করা ঠিক নয়। তাই যখন তারা কোনো ভুল কাজ করে, তখন তারা নিজেদের দোষী বলে মনে করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সমাজ, ধর্ম এবং সংস্কৃতি থেকে যে-মানগুলো শিখি, সেগুলোর দ্বারা আমাদের বিবেক গঠিত হয়। আর আমরা যখন কোনো সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমাদের বিবেক বলে দেয় যে, আমরা সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে যা শিখেছি, সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি কি না।

সঠিক ও ভুল সম্বন্ধে আমরা যা মনে করি, তা আমাদের অন্যদের প্রতি সমবেদনা, কৃতজ্ঞতা, সুবিচার এবং করুণা দেখাতে সাহায্য করে। এটা আমাদের এমন কিছু করা থেকে বিরত করে, যেটা আমাদের প্রিয়জনদের দুঃখ দিতে পারে অথবা আমাদের অস্বস্তিকর কিংবা লজ্জাজনক অবস্থায় ফেলতে পারে এবং আমাদের দোষী করতে পারে।

আমরা যা মনে করি, তা কি সবসময় আমাদের নির্ভরযোগ্য নির্দেশনা দেয়? গ্যারিক নামে এক যুবক এমনভাবে জীবনযাপন করতেন, যেটা সম্বন্ধে তিনি বলেন, “আমি আমার নিজের মান নিজেই স্থির করতাম।” কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারেন, তিনি যে-কাজগুলোকে সঠিক বলে মনে করতেন, সেগুলো ভালো ফলাফল নিয়ে আসেনি। তিনি সেইসময় এমন এক জীবনযাপন করা বেছে নিয়েছিলেন, যেটা সম্বন্ধে পরে তিনি বলেন, “আমি অনৈতিক কাজ করতাম, ড্রাগের অপব্যবহার করতাম, মাতাল হতাম এবং দৌরাত্ম্যপ্রিয় কাজ করতাম।”

অন্যেরা যা মনে করে

আমরা নিজেরা যা মনে করি, সেটার পাশাপাশি অন্যেরা আমাদের সিদ্ধান্তকে কোন দৃষ্টিতে দেখে, সেটাও আমাদের উপর প্রভাব ফেলে। সেই ব্যক্তিদের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা থেকে আমরাও উপকার লাভ করতে পারি। তারা যে-বিষয়গুলোকে সঠিক বলে মনে করে, আমরা যখন সেই অনুযায়ী কাজ করি, তখন আমরা আমাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সমাজের কাছ থেকে সম্মান লাভ করতে পারি।

অন্যেরা যা মনে করে, তা কি সবসময় আমাদের নির্ভরযোগ্য নির্দেশনা দেয়? প্রিসিল্লা নামে এক যুবতী এমন কাজগুলো করতেন, যে-কাজগুলো তার বন্ধুদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় ছিল আর বিয়ের আগেই তিনি শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন, অন্যেরা যেগুলোকে সঠিক কাজ বলে মনে করে, সেগুলো তাকে খুশি করতে পারেনি। তিনি বলেন, “অন্যদের দেখানো রাস্তায় চলে আমি খুশি হতে পারিনি। আমি বোকার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি এবং বিপদে জড়িয়ে পড়ি।”

অন্য কোনো ভালো পথ কি আছে?

আমরা যখন সঠিক ও ভুলের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিই, তখন আমরা যা মনে করি এবং অন্যেরা যা মনে করে, সেটা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সেই নির্দেশনা সবসময় যে ভালো ফল নিয়ে আসবে, এমনটা নয়। আমরা যদি পরিণাম নিয়ে চিন্তা না করে কোনো কাজ করি, তা হলে আমরা বিপদে জড়িয়ে পড়তে পারি। এ ছাড়া আমরা বুঝতে পারি না, সেটা আমাদের এবং অন্যদের উপর কতটা ক্ষতি নিয়ে আসবে। (হিতোপদেশ ১৪:১২) এই বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই যে, আমরা যা ভালো বলে মনে করি অথবা আমাদের আশেপাশের লোকেরা যে-বিষয়গুলো ভালো বলে মনে করে, সেগুলো সত্যিই ভালো ফল নিয়ে আসবে আর সেগুলো কখনো পরিবর্তিত হবে না। আসলে এমন অনেক আচার-আচরণ রয়েছে, যেগুলো একসময় লোকেরা ভুল বলে মনে করত, কিন্তু বর্তমানে সেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। আবার অন্য দিকে, আগে গ্রহণযোগ্য ছিল এমন অনেক আচার-আচরণকে লোকে এখন আর ঠিক বলে মনে করে না।

অন্যেরা যা মনে করে, তা কি সবসময় আমাদের নির্ভরযোগ্য নির্দেশনা দেয়?

কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কাছে কি এর চেয়েও ভালো কোনো নির্দেশনা রয়েছে? এমন কোনো নৈতিক মান কি রয়েছে, যেটা বর্তমানে অনুসরণ করলে অনেক বছর পরেও সেটার জন্য আমাদের আপশোস করতে হবে না?

ভালো বিষয়টা হল, এমন এক নৈতিক নির্দেশনা রয়েছে, যেটা সময়ের স্রোতে পুরোনো হয়ে যায় না এবং তা পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য। সেই নির্দেশনা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পরবর্তী প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে, কোথায় আমরা সবচেয়ে ভালো ও নির্ভরযোগ্য নির্দেশনা খুঁজে পেতে পারি, যেটা আমাদের সঠিক ও ভুল নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে।