প্রচ্ছদ বিষয় | অলৌকিক বিষয়গুলোর আড়ালে কী রয়েছে?
প্রেতচর্চা সম্বন্ধে বাইবেল কী শিক্ষা দেয়?
অনেকে অলৌকিক শক্তি ও প্রেতচর্চা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে এবং মনে করে যে, এগুলো মানুষের কারসাজি কিংবা সিনেমা জগতের গল্পলেখকদের মনের কল্পনা; কিন্তু বাইবেল এই বিষয়ে একেবারে ভিন্ন ধারণা তুলে ধরে। এটি প্রেতচর্চা সম্বন্ধে স্পষ্ট সতর্কবাণী প্রদান করে। উদাহরণ স্বরূপ, দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১৩ পদ বলে, “তোমার মধ্যে যেন এমন কোন লোক পাওয়া না যায়, . . . যে মন্ত্র ব্যবহার করে, বা গণক, বা মোহক, বা মায়াবী, বা ঐন্দ্রজালিক, বা ভূতড়িয়া, বা গুণী বা প্রেতসাধক।” কেন? শাস্ত্র আরও জানায়: “সদাপ্রভু এই সকল কার্য্যকারীকে ঘৃণা করেন। . . . তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে সিদ্ধ [“নির্দোষ,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] হও।”
কেন বাইবেল সমস্ত ধরনের প্রেতচর্চাকে দৃঢ়ভাবে নিন্দা করে?
অপ্রীতিকর উৎপত্তি
বাইবেল আমাদের জানায়, পৃথিবী সৃষ্টির বহু পূর্বে ঈশ্বর লক্ষ লক্ষ আত্মিক প্রাণী বা স্বর্গদূতদের সৃষ্টি করেছিলেন। (ইয়োব ৩৮:৪, ৭; প্রকাশিত বাক্য ৫:১১) প্রত্যেক স্বর্গদূতের স্বাধীন ইচ্ছা ছিল অর্থাৎ ভালো ও মন্দের মধ্যে বেছে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল আর পৃথিবীতে মন্দতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাদের স্বর্গীয় স্থান ত্যাগ করে পৃথিবীতে নেমে এসেছিল। এর ফলে, পৃথিবী “দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ” হয়ে গিয়েছিল।—আদিপুস্তক ৬:২-৫, ১১; যিহূদা ৬.
বাইবেল জানায় যে, সেই মন্দ দূতেরা লক্ষ লক্ষ লোককে ভুল পথে পরিচালিত করার জন্য তাদের ক্ষমতাকে কাজে লাগাচ্ছে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) তারা এমনকী ভবিষ্যৎ জানার বিষয়ে মানুষের স্বাভাবিক কৌতূহলকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে।—১ শমূয়েল ২৮:৫, ৭; ১ তীমথিয় ৪:১.
২ করিন্থীয় ১১:১৪) কিন্তু বাস্তবে, দুষ্ট স্বর্গদূতেরা মানুষের মনকে অন্ধ করার চেষ্টা করছে, যাতে তারা ঈশ্বর সম্বন্ধে সত্য জানতে না পারে।—২ করিন্থীয় ৪:৪.
এটা ঠিক যে, কিছু কিছু অলৌকিক শক্তি মানুষকে সাহায্য করে বলে মনে হয়। (তাই বাইবেল অনুসারে, মন্দ আত্মাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা নিছক মজার বিষয় নয়। এই কারণে, যিশুর সম্ভাব্য শিষ্যদের যখন শেখানো হয়েছিল, এই ধরনের কাজের পিছনে সত্য বিষয়টা কী, তখন “যাহারা যাদুক্রিয়া করিত, তাহাদের মধ্যে অনেকে আপন আপন পুস্তক আনিয়া একত্র করিয়া . . . পোড়াইয়া ফেলিল।” যদিও তা করার ফলে, তাদের বিরাট আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল।—প্রেরিত ১৯:১৯.
একইভাবে, বর্তমানে অনেকে প্রেতচর্চার সঙ্গে জড়িত কাজকর্ম ও বিনোদনের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে মারিয়ার * কথা বিবেচনা করুন। ১২ বছর বয়স থেকেই তিনি ভবিষ্যতের কিছু কিছু ঘটনা কিংবা বিপদ সম্বন্ধে আগে থেকে বলতে পারতেন বলে মনে করা হতো। তিনি সহছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ট্যারোট কার্ড পড়তেন আর তার কথাগুলো যেহেতু মিলে যেত, তাই ভৌতিক বিষয়গুলো তার ভালো লাগতে শুরু করেছিল।
মারিয়া ভেবেছিলেন, এটা ঈশ্বরের কাছ থেকে একটা দান, যেটার দ্বারা তিনি লোকেদের সাহায্য করতে পারছেন। পরে তিনি স্বীকার করেন: “কিন্তু কিছু কিছু বিষয় নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। আমি অন্যের জন্য কার্ড পড়তে পারলেও নিজের জন্য পারতাম না। আমি যখন নিজের ভবিষ্যৎ জানার চেষ্টা করতাম, তখন ব্যর্থ হতাম।”
অনেক প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে মারিয়া ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন। পরে যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয় আর তিনি তাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করেন। মারিয়া বাইবেল থেকে জানতে পারেন যে, ভবিষ্যৎ বলার বিষয়ে তার ক্ষমতা ঈশ্বরের কাছ থেকে আসেনি। এ ছাড়া, তিনি এটাও শেখেন, যারা ঈশ্বরের বন্ধু হতে চায়, তাদের প্রেতচর্চার সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলো থেকে মুক্ত হতে হবে। (১ করিন্থীয় ১০:২১) এর ফল কী হয়েছিল? মারিয়া ভৌতিক বিষয়ের সঙ্গে জড়িত জিনিসপত্র ও বইগুলো ফেলে দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি বাইবেল থেকে যে-সত্যগুলো শিখেছেন, সেগুলো অন্যদের জানাচ্ছেন।
মাইকেল কিশোর বয়সে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে লেখা রূপকথার গল্পগুলো পড়তে ভালোবাসতেন। তিনি বলেন, “আমি যখন আমার বয়সি কাল্পনিক জগতের নায়কদের সম্বন্ধে পড়তাম, তখন মনে মনে চিন্তা করতাম যে, আমিই সেই নায়ক। আর এই বিষয়টা আমার খুব ভালো লাগত।” ধীরে ধীরে মাইকেল জাদুবিদ্যা ও শয়তানের উপাসনার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন বইপত্র পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন। তিনি স্বীকার করেন, “কৌতূহলের বশে আমি এই বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বই পড়তাম ও সিনেমা দেখতাম।”
কিন্তু, বাইবেল অধ্যয়ন করার পর মাইকেল বুঝতে পারেন, তিনি যে-বইগুলো পড়ছেন, সেগুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন: “আমি প্রেতচর্চার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এমন সমস্ত কিছুর একটা তালিকা তৈরি করি আর সেগুলো নষ্ট করে ফেলি। আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করি। ১ করিন্থীয় ১০:৩১ পদে বাইবেল জানায়, ‘সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর।’ এখন কোনো বই পড়ার সময় নিজেকে জিজ্ঞেস করি, ‘আমি যা পড়ছি, সেটাতে কি এমন কিছু রয়েছে, যা ঈশ্বরকে গৌরব প্রদান করতে বাধা দেয়?’ যদি দেয়, তা হলে আমি সেটা এড়িয়ে চলি।”
উপযুক্ত কারণেই বাইবেলকে প্রদীপ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এটি জ্ঞানের আলো প্রদান করে, যা প্রেতচর্চার মুখোশ খুলে দেয়। (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫) কিন্তু, বাইবেল আরও বেশি কিছু জানায়। এটি এমন এক জগৎ সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করে, যেখানে মন্দ আত্মারা আর থাকবে না। এর ফলে, সমগ্র মানবজাতি উপকৃত হবে। উদাহরণ স্বরূপ, গীতসংহিতা ৩৭:১০, ১১ পদ বলে: “আর ক্ষণকাল, পরে দুষ্ট লোক আর নাই, তুমি তাহার স্থান তত্ত্ব করিবে, কিন্তু সে আর নাই। কিন্তু মৃদুশীলেরা দেশের অধিকারী হইবে, এবং শান্তির বাহুল্যে আমোদ করিবে।” ▪
^ অনু. 10 এই প্রবন্ধে নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।