সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পরিবারের জন্য সাহায্য | সন্তান লালনপালন

ঘরের ছোটোখাটো কাজের গুরুত্ব

ঘরের ছোটোখাটো কাজের গুরুত্ব

প্রতিদ্বন্দ্বিতা

কোনো কোনো পরিবারে এমনটা আশা করা হয় যে, সন্তানরা ঘরের বিভিন্ন কাজে বাবা-মাকে সাহায্য করবে আর সন্তানরাও কোনো অভিযোগ না করেই সেগুলো করে থাকে। আবার অনেক পরিবারে, বাবা-মায়েরা সন্তানদের দিয়ে ঘরের কাজ করাতে চায় না আর বাধ্যবাধকতা না থাকায় সন্তানরাও বেশি কাজ করতে পছন্দ করে না।

গবেষকরা অনেক দেশে এই ধরনের প্রবণতা লক্ষ করেছেন, যেখানে সন্তানদের মধ্যে সাহায্য করার পরিবর্তে ভোগ করার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। স্টিভেন নামে এক বাবা লক্ষ করেন, “বর্তমানে সন্তানদের একা ভিডিও গেম খেলতে, ইন্টারনেট সার্ফিং করতে ও টিভি দেখতে দেওয়া হয়। তারা যে কাজ করবে, এমনটা আশা করা হয় না।”

আপনাদের কী মনে হয়? ঘর গুছিয়ে রাখার পাশাপাশি সন্তানের বিকাশের জন্য ঘরের ছোটোখাটো কাজ করা কি সত্যিই তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

আপনার যা জানা উচিত

কোনো কোনো বাবা-মা সন্তানদের দিয়ে ঘরের কাজ করাতে চায় না। বিশেষ করে সেই সময়, যখন তাদের সারা সপ্তাহে প্রচুর হোমওয়ার্ক আর সেইসঙ্গে স্কুলের পরে আনুসঙ্গিক কিছু কাজ থাকে। কিন্তু, ঘরের কাজ করার কিছু উপকারিতা বিবেচনা করুন।

ঘরের ছোটোখাটো কাজ করা সন্তানদের পরিপক্ব হতে সাহায্য করে। যে-সন্তানরা ঘরের কাজে সাহায্য করে, তারা স্কুলে সফলতা অর্জন করে বলে মনে করা হয় আর এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ঘরের কাজে অংশ নেওয়ার ফলে সন্তানদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়, তারা আত্মসংযমী হয় ও দৃঢ় চরিত্র গড়ে তোলে, যেগুলো শিক্ষা গ্রহণের জন্য জরুরি।

ঘরের ছোটোখাটো কাজ করা সন্তানদের অন্যদের সেবা করতে প্রস্তুত করে। কেউ কেউ লক্ষ করেছে, যে-সন্তানরা ঘরের কাজে সাহায্য করে, তারা সম্ভবত বড়ো হয়ে সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নেয়। এতে আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু নেই কারণ ঘরের ছোটোখাটো কাজ করা তাদের নিজেদের চেয়ে বরং অন্যদের প্রয়োজনীয়তাকে আগে রাখতে প্রশিক্ষণ দেয়। অন্যদিকে, আগে উল্লেখিত স্টিভেন এই মন্তব্য করেন: “যখন সন্তানদের কাছ থেকে কোনো কাজ আশা করা হয় না, তখন তারা মনে করে তাদের হয়ে কেউ কাজ করে দেবে। জীবনে যে দায়িত্ব নেওয়ার ও কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন রয়েছে, সেই সম্বন্ধে এক ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তারা বড়ো হয়ে ওঠে।”

ঘরের ছোটোখাটো কাজ করা পরিবারকে একতাবদ্ধ হতে সাহায্য করে। সন্তানরা যখন ঘরে কাজ করার প্রচেষ্টা করে, তখন তারা শুধু এটাই উপলব্ধি করে না যে, তারা পরিবারের এক মূল্যবান সদস্য কিন্তু সেইসঙ্গে তারা বোঝে, পরিবারের প্রতি তাদের একটা দায়িত্ব রয়েছে। সন্তানরা এই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়, যখন বাবা-মায়েরা ঘরের কাজের পরিবর্তে, স্কুলের পরে আনুসঙ্গিক কাজ করাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমার সন্তান যদি ফুটবল টিমের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়ে ফেলে, তা হলে কী লাভ?’

আপনি যা করতে পারেন

ছোটো থাকতেই শুরু করুন। অনেকে বলে থাকে, বাবা-মায়ের উচিত তিন বছর বয়স থেকেই সন্তানদের ছোটোখাটো কাজ দেওয়া। আবার কেউ কেউ বলে, দু-বছর কিংবা তার চেয়ে ছোটো বয়স থেকেই তাদের কিছু কাজ করতে দেওয়া ভালো। আসলে, খুব ছোটো সন্তানরা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কাজ করতে ভালোবাসে আর তারা তাদের বাবা-মাকে অনুকরণ করে।—বাইবেলের নীতি: হিতোপদেশ ২২:৬.

বয়স অনুযায়ী কাজ দিন। উদাহরণ স্বরূপ, তিন বছরের এক শিশু হয়তো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা খেলনা তুলে রাখতে, কোনো কিছু পড়ে গেলে পরিষ্কার করতে কিংবা রং অনুযায়ী ধোয়ার কাপড় আলাদা করে রাখতে পারে। একটু বড়ো বয়সের সন্তানরা হয়তো ঘর ঝাড়ু দিতে, গাড়ি ধুতে আর এমনকী রান্না করতে পারে। আপনার সন্তানদের যতটা ক্ষমতা, সেই অনুযায়ী কাজ দিন। আপনি হয়তো এটা দেখে অবাক হয়ে যাবেন, তারা সেই কাজ কত উদ্যোগের সঙ্গে করছে!

ঘরের ছোটোখাটো কাজকে অগ্রাধিকার দিন। আপনার সন্তানদের যখন প্রতিদিন একগাদা হোমওয়ার্ক করতে হয়, তখন তাদের পক্ষে কাজ করা হয়তো কষ্টকর হতে পারে। কিন্তু, বেশি নম্বর পাওয়ার জন্য ঘরের ছোটোখাটো কাজ করতে না দেওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বিশেষ সুযোগগুলোর মূল্য (ইংরেজি) নামক বই বলে, “অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোকে ভুল স্থানে রাখার লক্ষণ।” আগে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, ঘরের ছোটোখাটো কাজ করা সন্তানদের আরও ভালো ছাত্র বা ছাত্রী হয়ে উঠতে সাহায্য করে। এভাবে লাভ করা শিক্ষা তাদের সেই সময়ের জন্য প্রস্তুত করবে, যখন তাদের নিজেদের পরিবার হবে।—বাইবেলের নীতি: ফিলিপীয় ১:১০.

ফলাফল নয় বরং লক্ষ্যের দিকে মনোযোগ দিন। একটা কাজ করতে আপনার সন্তান হয়তো আপনি যতটা ভেবেছিলেন, সেটার চেয়ে বেশি সময় নিতে পারে। আপনি হয়তো এটাও লক্ষ করলেন, কাজটা সে আরও ভালোভাবে করতে পারত। এমনটা ঘটলে, অধৈর্য হয়ে তাদের পরিবর্তে নিজে সেই কাজটা করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আপনার লক্ষ্য এটা নয়, তাদের দিয়ে বড়োদের মতো নিখুঁত কাজ করানো কিন্তু তাদের দায়িত্ববান হতে এবং কাজের মধ্যে যে-আনন্দ রয়েছে, তা খুঁজে পেতে সাহায্য করা।—বাইবেলের নীতি: উপদেশক ৩:২২.

সঠিক পুরস্কারের দিকে মনোযোগ দিন। অনেকে বলে, ঘরের ছোটোখাটো কাজ করে দেওয়ার পর সন্তানদের হাতখরচ দিলে তারা দায়িত্ববান হতে শেখে। আবার অন্যেরা বলে, এটা করলে সন্তানরা পরিবারকে সাহায্য করার পরিবর্তে কাজটা করার পর বাবা-মায়ের কাছ থেকে নিজেরা কী পাবে, সেই দিকে মনোযোগ দেয়। তারা এই বিষয়েও সাবধান করে, সন্তানদের হাতে যদি যথেষ্ট টাকাপয়সা থাকে, তা হলে তারা ঘরের কাজ করতে চাইবে না আর যে-লক্ষ্য নিয়ে তাদের ঘরের কাজ করানো হচ্ছিল, সেটার উপকারিতা থেকে সন্তানেরা বঞ্চিত হবে। এখান থেকে কোন শিক্ষা লাভ করা যায়? এটা আরও ভালো হবে, সন্তানদের যদি কোনো হাতখরচ দেওয়া হয়, তা হলে সেটা যেন তাদের কাজের জন্য না দেওয়া হয়। ◼