পৃথিবী কি রক্ষা পাবে?
বাতাস
বাতাস আমাদের প্রত্যেকের জন্য খুবই জরুরি, কিন্তু তা শুধু নিশ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্যই নয়। বাতাস আমাদের পৃথিবীকে সূর্যের বেশিরভাগ ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখে। বাতাস ছাড়া পৃথিবীর চারপাশের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির নীচে নেমে যেতে পারে।
যে-কারণে বাতাস দূষিত হচ্ছে
দূষিত বাতাস পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সমস্ত প্রাণী ও গাছপালাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, পৃথিবীর জনসংখ্যার খুব কম লোকই বিশুদ্ধ বাতাস নেয়।
দূষিত বাতাসের জন্য মানুষ বিভিন্ন রোগের শিকার হয়, যেমন শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হৃদ্রোগ। এই দূষিত বাতাস নেওয়ার ফলে প্রতি বছর প্রায় ৭০ লক্ষ লোক অকালে প্রাণ হারায়।
আমাদের পৃথিবী—বেঁচে থাকার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে
আমাদের পৃথিবীকে এমনভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে এর মধ্যে থাকা প্রত্যেক প্রাণী ও গাছপালা বিশুদ্ধ বাতাস পেতে পারে। কিন্তু এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া তখনই বেশি কার্যকারী, যখন মানুষ বাতাস দূষিত না করার বিষয়ে সতর্ক থাকে। কয়েকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন।
-
আমরা প্রত্যেকেই জানি, বনভূমি কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করতে পারে। কিন্তু সমুদ্রের ধারে নোনা জলাভূমিতে যে-গাছগুলো জন্মায়, সেগুলো যে এই ক্ষেত্রে আরও বেশি কার্যকারী, তা বেশি কেউ জানে না। ক্রান্তীয় বনভূমি থেকে এই গাছগুলো প্রায় ৫ ভাগ বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করতে পারে।
-
সম্প্রতি একটা গবেষণা দেখায়, কিছু বড়ো বড়ো শ্যাওলা বাতাস থেকে শুধুমাত্র কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণই করে না, কিন্তু তা নষ্ট করে ফেলে। এইরকম একটা শ্যাওলা হল কেল্প। কেল্পের পাতার মতো অংশে বাতাসে পূর্ণ ছোটো ছোটো থলি থাকে, যেটা এদের অনেক দূর পর্যন্ত ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সমুদ্রতীর থেকে অনেক দূরে গিয়ে সেই থলিগুলো ফেটে যায় এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড পূর্ণ কেল্প সমুদ্রের তলায় তলিয়ে যায়। সেখানে তারা সুপ্ত অবস্থায় কয়েক-শো বছর পর্যন্ত থাকতে পারে বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
-
কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় এটা প্রমাণিত হয়েছে, আমাদের বায়ুমণ্ডল নিজে নিজেই দূষণমুক্ত হতে পারে। ২০২০ সালে যখন পৃথিবীর বেশিরভাগ কল-কারখানা ও যানবাহন চলাচল থেমে গিয়েছিল, তখন দূষণ দ্রুত কমতে শুরু করেছিল এবং বাতাসের গুণগত মান বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল। বেশ কিছু দেশের উপর গবেষণা করার পর “২০২০ ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট” একটা তথ্য প্রকাশ করে আর তা হল, এদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি দেশের বাতাস লকডাউন চালু হওয়ার অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই দূষণমুক্ত হতে শুরু করে।
সমস্যা সমাধান করার জন্য মানুষ যা করছে
বিভিন্ন দেশের সরকার তাদের দেশের কল-কারখানাগুলোকে বায়ুদূষণ কমানোর জন্য ক্রমাগত নির্দেশনা দিচ্ছে। এ ছাড়া, বিজ্ঞানীরা বাতাসকে দূষণমুক্ত রাখার নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে চলেছে। এইরকম একটা পদ্ধতি হল, বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াকে ব্যবহার করে বাতাসের মধ্যে থাকা দূষিত পদার্থগুলোকে বিষমুক্ত পদার্থে পরিণত করা। বিশেষজ্ঞরা মানুষকে এও পরামর্শ দিয়েছে, যেন তারা গাড়ি ব্যবহার না করে হেঁটে কিংবা সাইকেলে যাতায়াত করে। এ ছাড়া, তারা যেন বাড়িতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অপচয় না করে।
কিন্তু, এটাই যথেষ্ট নয়, আরও বেশি কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একত্রিতভাবে যে-রিপোর্ট পেশ করেছে, সেখান থেকে আমরা এর প্রমাণ পাই। এই সংস্থাগুলোর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কও রয়েছে।
এই রিপোর্ট জানায়, ২০২০ সালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ লোক এমন উপায়ে রান্নাবান্না করে, যেটা বাতাসকে দূষিত করে। অনেক এলাকায় বেশিরভাগ মানুষের আধুনিক স্টোভ কেনার সামর্থ্য নেই কিংবা তারা বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থা পায় না।
আশার এক আলো—বাইবেল যা বলে
“সদাপ্রভু ঈশ্বর, যিনি আকাশমণ্ডল সৃষ্টি করিয়াছেন ও . . . যিনি ভূতল ও তদুৎপন্ন সমস্তই বিছাইয়াছেন, যিনি তন্নিবাসী সকলকে নিঃশ্বাস দেন, ও তথাকার সমস্ত জঙ্গমকে জীবাত্মা দেন, তিনি এই কথা কহেন।”—যিশাইয় ৪২:৫.
ঈশ্বর আমাদের বেঁচে থাকার জন্য বাতাস আর সেইসঙ্গে বাতাস বিশুদ্ধ রাখার জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক চক্র সৃষ্টি করেছেন। তিনি অনন্ত শক্তির অধিকারী এবং মানবজাতির প্রতি তাঁর ভালোবাসা রয়েছে। তাহলে তিনি কি বাতাসকে দূষণমুক্ত করার জন্য কিছু করবেন না? “ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেন আমাদের পৃথিবী রক্ষা পাবে,” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।