সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার সাক্ষিরা কেন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে না?

যিহোবার সাক্ষিরা কেন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে না?

আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য

যিহোবার সাক্ষিরা কেন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে না?

 যিহোবার সাক্ষিরা যেখানেই বাস করুক না কেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে অথবা একই দেশের যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘটিত আক্ষরিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে তাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। “যিহোবার সাক্ষিরা যুদ্ধের সময়ে কঠোর নিরপেক্ষতা বজায় রাখে,” পঞ্চাশ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ান এনসাইক্লোপিডিয়া উল্লেখ করেছিল।

একটা যে-প্রধান কারণে সাক্ষিরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে, তা হল এই ধরনের যুদ্ধগুলোতে অংশগ্রহণ করা হবে তাদের খ্রিস্টীয় বিবেককে লঙ্ঘন করা। তাদের বিবেক প্রভু যিশু খ্রিস্টের আদেশগুলোর এবং উদাহরণের দ্বারা প্রশিক্ষিত হয়েছে। তিনি তাঁর অনুসারীদেরকে তাদের প্রতিবেশীদের ভালবাসতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি আরও আদেশ দিয়েছিলেন: “তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও; যাহারা তোমাদিগকে দ্বেষ করে, তাহাদের মঙ্গল করিও।” (লূক ৬:২৭; মথি ২২:৩৯) তাঁর একজন শিষ্য যখন একটা খড়্গ দ্বারা তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন, তখন যিশু তাকে বলেছিলেন: “তোমার খড়গ পুনরায় স্বস্থানে রাখ, কেননা যে সকল লোক খড়গ ধারণ করে, তাহারা খড়গ দ্বারা বিনষ্ট হইবে।” (মথি ২৬:৫২) এইভাবে, কথা ও উদাহরণের দ্বারা তিনি স্পষ্টভাবে দেখিয়েছিলেন যে, তাঁর অনুসারীরা আক্ষরিক যুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করবে না।

আরেকটা যে-কারণে যিহোবার সাক্ষিরা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে না, তা হল তারা বিশ্বব্যাপী এক ধর্মীয় দলের সদস্য। যুদ্ধ ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাইয়ের সংঘর্ষ সৃষ্টি করে আর তা “আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম” রাখার বিষয়ে যিশুর আদেশের বিপরীত।—যোহন ১৩:৩৫.

প্রেম দেখানো সম্বন্ধে ওপরের নীতিগুলো যিহোবার সাক্ষিরা যে শুধু মুখেই বলে থাকে তা নয়, বরং তারা সেই নীতিগুলো অনুযায়ী জীবনযাপনও করে থাকে। একটা উদাহরণ হিসেবে, ১৯৩৯-১৯৪৫ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তারা যে-পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল, তা পরীক্ষা করে দেখুন। যুক্তরাষ্ট্রে, ৪,৩০০ জনেরও বেশি যিহোবার সাক্ষিকে, সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে প্রত্যাখ্যান করার কারণে ফেডারেল জেলগুলোতে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। ব্রিটেনে, ১,৫০০ জনেরও বেশি সাক্ষি, যাদের মধ্যে ৩০০ জনেরও বেশি মহিলা ছিল, তাদেরকে যুদ্ধ সংক্রান্ত কাজকর্ম করতে অস্বীকার করার কারণে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। নাতসি জার্মানিতে, ২৭০ জনেরও বেশি সাক্ষিকে, অস্ত্র গ্রহণ করতে অস্বীকার করার কারণে সরকারি আদেশ অনুসারে হত্যা করা হয়েছিল। নাতসি শাসনের অধীনে, ১০,০০০-রেরও বেশি সাক্ষিকে, হয় জেল নতুবা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলোতে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। জাপানের সাক্ষিরাও সাংঘাতিকভাবে কষ্ট ভোগ করেছিল। যে-সমস্ত ব্যক্তি একই কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্রে অথবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যেকোনো যুদ্ধে তাদের প্রিয়জনদেরকে হারিয়েছে, তারা নিশ্চিত থাকতে পারে যে, এই ধরনের যেকোনো মৃত্যুর জন্য যিহোবার সাক্ষিদের একজনও দায়ী ছিলেন না।

যুদ্ধ সম্বন্ধে যিহোবার সাক্ষিদের দৃষ্টিভঙ্গি ভল্ফগাং কুসেরোর শেষ কথাগুলোতে সুন্দরভাবে ব্যক্ত হয়েছে। যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করার কারণে ১৯৪২ সালে নাতসিরা ২০ বছর বয়সি এই জার্মান ছেলেটির শিরশ্ছেদ করেছিল। (যিশাইয় ২:৪) সামরিক বিচারসভার সামনে তিনি বলেছিলেন: “পবিত্র শাস্ত্রে উল্লেখিত ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে, আমি একজন যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বড় হয়েছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র ব্যবস্থা, যেটা তিনি মানবজাতিকে দিয়েছিলেন, সেটা হল: ‘অন্য সমস্তকিছুর চেয়ে তুমি তোমার ঈশ্বরকে প্রেম করিবে এবং তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মতো প্রেম করিবে।’ অন্যান্য আজ্ঞায় বলা হয়: ‘হত্যা করিও না।’ আমাদের সৃষ্টিকর্তা এই সমস্তকিছু কি গাছপালার জন্য লিখেছিলেন?”—মার্ক ১২:২৯-৩১; যাত্রাপুস্তক ২০:১৩.

যিহোবার সাক্ষিরা বিশ্বাস করে যে, একমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যিহোবাই পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি নিয়ে আসবেন। তারা ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করার জন্য তাঁর ওপর নির্ভর করে যে, তিনি “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত যুদ্ধ নিবৃত্ত” করবেন।—গীতসংহিতা ৪৬:৯. (w০৮ ৭/১)