পরমদেশে অনন্তজীবন কি একঘেয়ে হবে?
আমাদের পাঠক-পাঠিকাদের জিজ্ঞাস্য . . .
পরমদেশে অনন্তজীবন কি একঘেয়ে হবে?
▪ বাইবেল আমাদেরকে এই আশা প্রদান করে যে, আমরা পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকতে পারি। (গীতসংহিতা ৩৭:২৯; লূক ২৩:৪৩) এক নিখুঁত পরিবেশে অনন্তকাল ধরে বেঁচে থাকা কি একঘেয়ে হবে?
এটা এক যথার্থ প্রশ্ন। গবেষকরা দেখেছে যে, দীর্ঘদিন ধরে একঘেয়েমি বোধ করার কারণে একজন ব্যক্তি হয়তো উদ্বিগ্ন ও হতাশ হয়ে পড়তে এবং ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা দেখাতে পারেন। যারা জীবনের কোনো উদ্দেশ্য খুঁজে পায় না অথবা তাদের দৈনন্দিন কাজের কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তারা হয়তো একঘেয়েমি বোধ করতে পারে। পরমদেশে কি তাদের জীবনের কোনো উদ্দেশ্য থাকবে না? সেখানে দৈনন্দিন কাজ কি নিরানন্দের হবে?
প্রথমে এই বিষয়টা বিবেচনা করুন যে, বাইবেলের লেখক যিহোবা ঈশ্বরই অনন্তজীবন প্রদান করার প্রস্তাব দেন। (যোহন ৩:১৬; ২ তীমথিয় ৩:১৬) ঈশ্বরের প্রধান গুণ হল প্রেম। (১ যোহন ৪:৮) যিহোবা আমাদেরকে খুবই ভালোবাসেন আর তিনি আমাদেরকে সেই সব উত্তম জিনিস দিয়েছেন, যেগুলো আমরা এখনই উপভোগ করছি।—যাকোব ১:১৭.
আমাদের সৃষ্টিকর্তা জানেন যে, সুখী হতে হলে আমাদেরকে উদ্দেশ্যমূলক কাজ করতে হবে। (গীতসংহিতা ১৩৯:১৪-১৬; উপদেশক ৩:১২) পরমদেশে কর্মীরা নিজেদেরকে রোবট বলে মনে করবে না। তারা যে-কাজ করবে, তা তাদের ও যাদেরকে তারা ভালোবাসে তাদেরকে সরাসরিভাবে উপকৃত করবে। (যিশাইয় ৬৫:২২-২৪) আপনাকে যদি আগ্রহজনক, রোমাঞ্চকর, পূর্ণসময়ের কাজ করতে হতো, তাহলে আপনি কি সেই জীবনকে একঘেয়েমি বলে মনে করতেন?
এ ছাড়া, এই বিষয়টাও বিবেচনা করুন যে, যিহোবা ঈশ্বর যেকাউকেই পরমদেশে থাকতে দেবেন না। তিনি অনন্তজীবনের দান কেবল তাদেরকেই প্রদান করবেন, যারা তাঁর পুত্র যিশুকে অনুকরণ করে। (যোহন ১৭:৩) পৃথিবীতে থাকাকালীন, যিশু তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করে আনন্দিত হয়েছিলেন। কথা ও উদাহরণ, উভয়ের দ্বারা তিনি তাঁর অনুসারীদের শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, গ্রহণ করার চেয়ে দান করার মাধ্যমেই স্থায়ী সুখ লাভ করা যায়। (প্রেরিত ২০:৩৫) পুনর্স্থাপিত পরমদেশে, সকলেই এই দুটো আজ্ঞা অনুসারে জীবনযাপন করবে, যেগুলো হল ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও প্রতিবেশীদের প্রতি প্রেম দেখানো। (মথি ২২:৩৬-৪০) সেই নিঃস্বার্থ লোকেদের মাঝে থাকার বিষয়টা একবার কল্পনা করুন, যারা আপনাকে ও তাদের কাজকে ভালোবাসে! আপনি কি মনে করেন যে, এই ধরনের লোকেদের সঙ্গে থাকা একঘেয়েমি হবে?
পরমদেশে জীবনের সঙ্গে আর কী জড়িত থাকবে? প্রতিদিন, আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে নতুন কিছু শিখতে পারব। গবেষকরা ইতিমধ্যেই যিহোবার সৃজনশীল কাজগুলো সম্বন্ধে উল্লেখযোগ্য অনেক বিষয় আবিষ্কার করেছে। (রোমীয় ১:২০) কিন্তু এ পর্যন্ত, আমরা যিহোবার সৃষ্টি সম্বন্ধে প্রকৃতপক্ষে খুব সামান্যই বুঝতে পেরেছি। হাজার হাজার বছর আগে, বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োব ঈশ্বরের সৃজনশীল কাজগুলো সম্বন্ধে যা জেনেছিলেন, তা তিনি পর্যালোচনা করেছিলেন আর তার উপসংহার আজও সত্য। “এই সকল [ঈশ্বরের] মার্গের প্রান্ত; তাঁহার বিষয়ে কাকলীমাত্র শুনা যায়; কিন্তু তাঁহার পরাক্রমের গর্জ্জন কে বুঝিতে পারে?”—ইয়োব ২৬:১৪.
আমরা যতদিনই বেঁচে থাকি না কেন, আমরা কখনোই যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর কাজগুলো সম্বন্ধে জানার জন্য সমস্তকিছু আবিষ্কার করতে পারব না। বাইবেল জানায় যে, ঈশ্বর আমাদের হৃদয়ে অনন্তকাল বেঁচে থাকার ইচ্ছা দিয়েছেন। কিন্তু এটি এও বলে যে, “ঈশ্বর আদি অবধি শেষ পর্য্যন্ত যে সকল কার্য্য করেন,” আমরা ‘তাহার তত্ত্ব বাহির করিতে পারিব না।’ (উপদেশক ৩:১০, ১১) আপনি কি মনে করেন যে, আপনার সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে নতুন নতুন বিষয় শেখার ব্যাপারে আপনি কখনো একঘেয়েমি বোধ করবেন?
এমনকী এখনই, যারা অন্যদের উপকার করে ও ঈশ্বরের গৌরব নিয়ে আসে এমন কাজ করায় ব্যস্ত থাকে, তারা কদাচিৎ একঘেয়েমি বোধ করে। তাই আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমরাও যদি একই কাজ করায় ব্যস্ত থাকি, তাহলে আমরা কখনো একঘেয়েমি বোধ করব না—এমনকী আমরা যদি অনন্তকালও বেঁচে থাকি। (w১১-E ০৫/০১)
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
পৃথিবী: Image Science and Analysis Laboratory, NASA-Johnson Space Center; ছায়াপথ: The Hubble Heritage Team (AURA/STScI/NASA)