সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার পক্ষে প্রলোভন প্রতিরোধ করা সম্ভব!

আপনার পক্ষে প্রলোভন প্রতিরোধ করা সম্ভব!

“পর্নোগ্রাফি দেখার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিল না। কিন্তু, ইন্টারনেট খোলার পর আমি হঠাৎই সেখানে একটা বিজ্ঞাপন দেখতে পাই। একটা ছবি ভেসে ওঠে। আর জানি না কেন, আমি সেটা খোলার জন্য ক্লিক করি।”—পিটার। *

“কাজের জায়গায় এক সুন্দরী মেয়ে আমার সঙ্গে প্রেমের ভান করতে শুরু করে। একদিন সে আমাকে তার সঙ্গে হোটেলে ‘রাত কাটানোর জন্য ডাকে।’ আমি জানতাম যে, সে আমার কাছ থেকে কী চাইছে।”—মার্ক।

কে উ কেউ প্রলোভনে পড়তে চায়। আবার অন্যেরা এটাকে এমন এক শত্রু হিসাবে দেখে, যা তাদের পিছু ছাড়তে চায় না আর যেটাকে প্রতিরোধ করতে পারলে তারা খুশি হয়। আপনার কী মনে হয়? প্রলোভনের মুখোমুখি হলে, আপনার কি নতিস্বীকার করা উচিত না কি প্রতিরোধ করা উচিত?

অবশ্য, সমস্ত প্রলোভনই যে বড়ো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে, তা কিন্তু নয়। উদাহরণ স্বরূপ, রোগা হওয়ার চেষ্টা করার সময় কেক-জাতীয় জিনিস খেলে, আপনি হয়তো মারা যাবেন না। কিন্তু অন্যান্য প্রলোভন, বিশেষ করে যেগুলো যৌন অনৈতিকতার দিকে নিয়ে যায়, সেগুলোর কাছে নতিস্বীকার করা মারাত্মক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে। বাইবেল আমাদের সাবধান করে: “যে ব্যভিচার করে তার বুদ্ধির অভাব আছে; সে তা করে নিজেকেই ধবংস করে।”—হিতোপদেশ ৬:৩২, ৩৩, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন।

আপনি যদি হঠাৎ করে কোনো অনৈতিক প্রলোভনের মুখোমুখি হন, তাহলে আপনার কী করা উচিত? এর উত্তরে বাইবেল বলে: “ঈশ্বরের ইচ্ছা এই—তোমরা পবিত্র হও, অর্থাৎ সব রকম ব্যভিচার থেকে দূরে থাক, আর . . . তোমরা প্রত্যেকে নিজের দেহকে পবিত্রভাবে সম্মানের সংগে দমনে রাখতে শেখ।” (১ থিষলনীকীয় ৪:৩-৫, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) কীভাবে আপনি প্রতিরোধ করার ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারেন? আসুন, আমরা তিনটে পদক্ষেপ বিবেচনা করি, যেগুলো আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

পদক্ষেপ ১: নিজের চোখকে রক্ষা করুন

যৌনউদ্দীপক ছবিগুলো দেখা অনুপযুক্ত আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তোলে, যা অনেকটা আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করে। কোনো কিছু দেখা ও তার প্রতি আকাঙ্ক্ষা গড়ে তোলার মধ্যে যে-সম্পর্ক রয়েছে, সেই বিষয়ে সাবধান করতে গিয়ে যিশু বলেছিলেন: “যে কেহ কোন স্ত্রীলোকের প্রতি কামভাবে দৃষ্টিপাত করে, সে তখনই মনে মনে তাহার সহিত ব্যভিচার করিল।”  অতিরঞ্জিত করার মতো কথাগুলো ব্যবহার করে, তিনি এই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আর তোমার দক্ষিণ চক্ষু যদি তোমার বিঘ্ন জন্মায়, তবে তাহা উপড়াইয়া দূরে ফেলিয়া দেও।” (মথি ৫:২৮, ২৯) যিশু আসলে আমাদেরকে কী শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন? প্রলোভনকে প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের উচিত যৌনউদ্দীপক ছবিগুলো না দেখা এবং দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হয়ে পদক্ষেপ নেওয়া।

আপনি যখন যৌন উদ্দীপনামূলক কোনো কিছু দেখেন, তখন চোখ সরিয়ে নিন

উদাহরণ স্বরূপ: কল্পনা করুন, ঝালাই (ওয়েলডিং) করার সময় যে চোখ-ধাঁধানো আলো বের হয়, সেদিকে আপনার চোখ চলে গেল। আপনি কি সেটার দিকে তাকিয়েই থাকবেন? কখনোই না। আপনি হয়তো মুখ ঘুরিয়ে নেবেন অথবা হাত দিয়ে চোখ ঢেকে নেবেন। একইভাবে, আপনি যদি পত্রপত্রিকায় কিংবা পর্দায় কোনো যৌনউদ্দীপক ছবি দেখেন অথবা এই ধরনের কোনো দৃশ্য আপনার চোখের সামনে ঘটে, তখন সঙ্গেসঙ্গে চোখ ফিরিয়ে নিন। আপনার মনকে কলুষিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করুন। চোয়ান, যিনি পূর্বে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ছিলেন, তিনি বলেন: “যখনই আমি কোনো সুন্দরী মেয়ে দেখি তখন আমার তাকে বার বার দেখতে ইচ্ছা করে। কিন্তু, সেইসময় আমি জোর করে অন্যদিকে তাকাই ও নিজেকে বলি: ‘যিহোবার কাছে প্রার্থনা করো! তোমাকে এক্ষুনি প্রার্থনা করতে হবে!’ প্রার্থনা করার পর, ধীরে ধীরে সেই আকাঙ্ক্ষা চলে যেতে থাকে।”—মথি ৬:৯, ১৩; ১ করিন্থীয় ১০:১৩.

বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োবের কথাও মনে করে দেখুন, যিনি বলেছিলেন: “আমি নিজ চক্ষুর সহিত নিয়ম করিয়াছি; অতএব যুবতীর প্রতি কটাক্ষপাত কেন করিব?” (ইয়োব ৩১:১) আপনিও তার মতো সঙ্কল্প নিন না কেন?

এটা করে দেখুন: আপনি যদি যৌন উদ্দীপনামূলক কোনো কিছু দেখতে পান, তাহলে সঙ্গেসঙ্গে চোখ ফিরিয়ে নিন। বাইবেলের সেই লেখককে অনুকরণ করুন, যিনি এভাবে প্রার্থনা করেছিলেন: “অলীকতা-দর্শন হইতে আমার চক্ষু ফিরাও।”—গীতসংহিতা ১১৯:৩৭.

পদক্ষেপ ২: নিজের চিন্তাভাবনাকে রক্ষা করুন

যেহেতু আমরা সকলেই অসিদ্ধ, তাই মাঝেমধ্যে আমাদের মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। বাইবেল বলে: “প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কামনা দ্বারা আকর্ষিত ও প্ররোচিত হইয়া পরীক্ষিত হয়। পরে কামনা সগর্ভা হইয়া পাপ প্রসব করে।” (যাকোব ১:১৪, ১৫) কীভাবে আপনি অনৈতিকতার জালে জড়িয়ে পড়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন?

আপনার মনে যখন মন্দ চিন্তাভাবনা আসে, তখন সেগুলো নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করুন ও সেইসঙ্গে প্রার্থনা করুন

মনে রাখবেন, আপনার মনের মধ্যে যখন কোনো মন্দ আকাঙ্ক্ষা আসে, তখন সেগুলোর প্রতি আপনি কীভাবে সাড়া দেবেন, তা একমাত্র আপনিই বেছে নিতে পারেন। সেই আকাঙ্ক্ষাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করুন। আপনার মন থেকে সেই চিন্তা দূর করে দিন। অনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে কল্পনা করা এড়িয়ে চলুন। ট্রয়, যিনি নিয়মিতভাবে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফি দেখতেন, তিনি বলেন: “মন্দ চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে মুক্ত করার  উদ্দেশ্যে ভালো বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করার জন্য আমাকে লড়াই করতে হতো। এটা করা ততটা সহজ ছিল না। আমি প্রায়ই একই ভুল করতাম কিন্তু শেষপর্যন্ত আমি আমার চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছিলাম।” এলসা নামে একজন মহিলা কিশোর বয়সে অনৈতিক প্রলোভনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তিনি বলেন, “নিজেকে ব্যস্ত রেখে এবং যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে, আমি মন্দ চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছিলাম।”

এটা করে দেখুন: আপনি যখন অনৈতিক চিন্তাভাবনার দ্বারা জর্জরিত হন, তখন সঙ্গেসঙ্গে সেগুলো নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করুন ও সেইসঙ্গে প্রার্থনা করুন। “যাহা যাহা সত্য, যাহা যাহা আদরণীয়, যাহা যাহা ন্যায্য, যাহা যাহা বিশুদ্ধ, যাহা যাহা প্রীতিজনক, যাহা যাহা সুখ্যাতিযুক্ত, যে কোন সদ্‌গুণ ও যে কোন কীর্ত্তি হউক,” সেই বিষয়গুলো দিয়ে নিজের মনকে পূর্ণ করে মন্দ চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে লড়াই করুন।—ফিলিপীয় ৪:৮.

পদক্ষেপ ৩: নিজের পদক্ষেপ রক্ষা করুন

যখন আকাঙ্ক্ষা, প্রলোভন ও সুযোগ একত্রে এসে যায়, তখন পিছু পিছু সমস্যাও আসে। (হিতোপদেশ ৭:৬-২৩) কীভাবে আপনি এটার শিকার হওয়া এড়িয়ে চলতে পারেন?

“আমি শুধু তখনই ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম, যখন অন্যেরা আমার আশেপাশে থাকত”

বাইবেলের বিজ্ঞ পরামর্শ হল: “সতর্ক লোক বিপদ দেখিয়া আপনাকে লুকায়, কিন্তু অবোধ লোকেরা অগ্রে গিয়া দণ্ড পায়।” (হিতোপদেশ ২২:৩) তাই, নিজের পদক্ষেপকে রক্ষা করুন। সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে এমন পরিস্থিতিগুলোর কথা আগে থেকেই চিন্তা করুন এবং সেগুলো এড়িয়ে চলুন। (হিতোপদেশ ৭:২৫) ফিলিপ, যিনি পর্নোগ্রাফির আসক্তি কাটিয়ে উঠেছিলেন, তিনি বলেন: “আমি আমাদের কম্পিউটারটাকে এমন জায়গায় রেখেছিলাম, যেখানে সবাই যাওয়া-আসা করে এবং এমন একটা প্রোগ্রাম সেট করেছিলাম, যেটা ইন্টারনেটের অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ধরতে পারে। আমি শুধু তখনই ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম, যখন অন্যেরা আমার আশেপাশে থাকত।” একইভাবে ট্রয়, যার বিষয়ে আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বলেন: “যৌনউদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে এমন সিনেমা দেখা এবং যারা যৌন বিষয় নিয়ে বিকৃত কথাবার্তা বলে, সেইসমস্ত লোকের সঙ্গে মেলামেশা করা আমি এড়িয়ে চলি। আমি নিজেকে বিপদের মুখে ফেলতে চাই না।”

এটা করে দেখুন: নিজের দুর্বলতাগুলো বিবেচনা করুন এবং যে-পরিস্থিতিগুলো আপনাকে প্রলোভনে ফেলতে পারে, সেগুলো এড়ানোর জন্য আগে থেকে চিন্তা করুন।—মথি ৬:১৩.

হাল ছেড়ে দেবেন না!

প্রাণপণ চেষ্টা করা সত্ত্বেও, আপনি যদি দুর্বল হয়ে পড়েন ও প্রলোভনের সামনে নতিস্বীকার করেন, তাহলে? হতাশ হবেন না আর হাল ছেড়ে দেবেন না। বাইবেল বলে: “ধার্ম্মিক সাত বার পড়িলেও আবার উঠে।” (হিতোপদেশ ২৪:১৬) আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদেরকে “উঠে” দাঁড়াতে উৎসাহিত করেন। আপনি কি তাঁর প্রেমময় সাহায্য গ্রহণ করতে চাইবেন না? যদি চান, তাহলে বার বার তাঁর কাছে প্রার্থনা করুন। তাঁর বাক্য অধ্যয়ন করার দ্বারা আপনার বিশ্বাস আরও বৃদ্ধি করুন। খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগ দিয়ে আপনার সংকল্পকে শক্তিশালী করুন। ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা থেকে উৎসাহ লাভ করুন, যা বলে: “আমি তোমাকে পরাক্রম দিব; আমি তোমার সাহায্য করিব।”—যিশাইয় ৪১:১০.

শুরুতে উল্লেখিত পিটার বলেন: “পর্নোগ্রাফি দেখার অভ্যাস কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাকে অনেক প্রচেষ্টা করতে হয়েছিল। একাধিক বার ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও শেষপর্যন্ত আমি ঈশ্বরের সাহায্যে সফল হয়েছিলাম।” মার্ক, যার বিষয় আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বলেন: “আমি চাইলেই আমার সহকর্মীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করতে পারতাম। কিন্তু, আমি হেরে যাইনি আর তার প্রস্তাবে রাজি হয়নি। আর এভাবে এক শুদ্ধ বিবেক বজায় রাখতে পেরে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমি যিহোবার হৃদয়কে গর্বিত করতে পেরেছিলাম।”

আপনি যখন দৃঢ়তার সঙ্গে প্রলোভনের প্রতিরোধ করেন, তখন নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, ঈশ্বরও আপনার জন্য গর্বিত হন!—হিতোপদেশ ২৭:১১. ▪ (w১৪-E ০৪/০১)

^ অনু. 2 এই প্রবন্ধে নামগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে।